• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

নির্বাচন

দলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তৃণমূল

  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। যদিও দলটির র্শীষ নেতারা বলছেন তৃণমূলে কর্মীদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন করার আগ্রহ সেভাবে নেই।

তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হবেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিএনপি কতটা কঠোর হতে পারবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

গত সোমবার প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর রাতে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের একপেশে ভূমিকার জন্য এর আগেও জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। ফলে আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিএনপি।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাদের যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলটির এই বার্তা ভোটে আগ্রহী তৃণমূলের নেতাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় ১ হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে ১২০ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ৩৪ ও জামায়াতের ১৫ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান সম্পর্কে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অস্পষ্টতায় ছিলেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। যার ফলে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কমবেশি বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলের অবস্থানের বাইরে গিয়ে যারা ভোটের মাঠে নেমেছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলের যারা ইতোমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশনা পাঠানো হবে।

উপজেলার ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিএনপির যুক্তি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনও হবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। তারা অংশ নিলে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছে দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি তাদের দলের পুরনো অবস্থান। তারা সেই অবস্থানেই অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যে ৪৫ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, এই সংখ্যাটা বেশি নয় বলেও মনে করছে বিএনপি। গয়েশ্বর রায় বলেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, তৃণমূলে কর্মীদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন করার আগ্রহ সেভাবে নেই।

তিনি বলেন, সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তাদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী মামলায় জর্জরিত। ২৭ হাজার বেশি কারাগারে গেছেন। ফলে তৃণমূলের কর্মীরা নতুন করে মামলা বা নির্যাতনের মুখোমুখি হতে চান না। এই পরিস্থিতি অগ্রাধিকার পেয়েছে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, দলের অবস্থানের বাইরে গিয়ে নেতারা ঝুঁকি নিয়ে ভোট করবেন, এই সংখ্যা বেশি হবে না।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, দলের নির্দেশনার পরও নেতাদের যারা ভোট করবেন, তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বিএনপি আসলে কতটা কঠোর হতে পারবে এই প্রশ্নে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন।

একই পথে হাটছে জামায়াতে ইসলামীও। দলটির আগের অবস্থান ছিল, কেন্দ্রীয়ভাবে ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা না দিয়ে যেসব উপজেলায় জয়ের সম্ভাবনা আছে, সেখানে দলের নেতারা স্থানীয়ভাবে প্রার্থী হবেন। তবে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দলের কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। যারা আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। জামায়াতের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে জামায়াত। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেবে না।

সিদ্ধান্ত বদলের আগে দলটির শতাধিক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং তিন শতাধিক নেতা ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখিয়ে ছিলেন। অনেকে গণসংযোগও শুরু করেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারও সাঁটান কয়েকজন জামায়াত নেতা। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের অন্তত ৪০ উপজেলার জামায়াত নেতারা ভোটের মাঠে ছিলেন। একই চিত্র ছিল উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্ধশতাধিক উপজেলায়। এসব এলাকায় দলটির ‘ভোট ব্যাংক’ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে দলের নির্দেশনার পর জামায়াত নেতারা নির্বাচন থেকে নীরবে সরে গেছেন।

কেন্দ্রীয় জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে, যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা প্রত্যাহার করে নেবেন।

জামায়াত বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা বললেও দলটির নেতারা গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, উপ-নির্বাচনে অংশ নেন। দুটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা জয়ীও হয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads